খুব কাছ থেকে পর্যালোচনা করে একটা জিনিস বুঝতে পারলাম আমাদের দেশে সরকারি অফিসে কাজের দীর্ঘসূত্রতার পেছনে এই ‘আমরা’ই দায়ী! প্রাইভেট ফার্মগুলোতে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় যে কাজ কত দ্রুত হয়ে যাচ্ছে। আদতে বিষয়টা পুরোপুরি সঠিক নয়!
একটা প্রাইভেট ফার্মের ক্লায়েন্ট বেজ সাধারণত থাকে কয়েক হাজার থেকে কয়েক লাখ পর্যন্ত। আর একটা সরকারি অফিসের ক্লায়েন্ট সেদেশের গোটা জনগণ। প্রাইভেট অফিসেও দেখেছি যে কাজ এক-থেকে দুইদিনের ভিতর সম্পন্ন করা সম্ভব সেটাও নানা অজুহাতে আজ না কাল করে এক-দুই সপ্তাহ কোন কারণ ছাড়াই পেছাতে দেখেছি। এমনকি আমি নিজেও কখনো কখনো কোথাও কাজ করতে যেয়ে দেখেছি যত দ্রুততা কিংবা জরুরী ভিত্তিতে ডাক দিয়ে আমাকে কাজটা দেয়া হয়েছিল কাজটা শেষ হবার পর তা ওনাদের বুঝে নিতে আজ না কাল করে কাজের স্পৃহাটায় দারুণ ব্যাঘাত ঘটাতে তারা বেশ পটু। আবার এমনও দেখা গিয়েছে তাফালিং এর সহিত ডেকে নিয়ে ওইদিন আর কাজটাই ওনারা দিতে পারলেন না। নানা ফর্মালিটি, এই সেই, কত কিছু, করে তাদের ব্যস্ততা বুঝাতে তারা দারুণ উৎসাহী। অথচ আমি দেখেছি যেখানে আমাকে এক থেকে দুইঘন্টা বসিয়ে রাখা হল কিংবা কাজ বুঝে নিতেই অহেতুক এক সপ্তাহের বেশি লাগালো, তারা আধঘন্টা, কোন কোন ক্ষেত্রে ১০মিনিট টাইম দিলেই কাজটা শেষ হয়ে যেত। এতে লাভবান আমি এবং আমার সাময়িক কর্তা দুজনেরই হত। সেটা সময় ও আর্থিক দু-দিক থেকেই। অবশ্য একটা মিথ আছে, এটা শুধু বাংলাদেশের জন্যই প্রযোজ্য কিনা জানা নেই, কারও সামনে ব্যস্ততা প্রমাণ করে নিজেকে জাহির করাতে আমরা বেশ পটু। পাবলিক তাতে খায়ও ভাল। হয়তো আমি একটু ভিন্নধর্মী বলে এসব ব্যস্ততা খুব একটা আমায় ছুঁতে পারেনা!
একটা জিনিস মাঝেমাঝে বেশ উপলব্ধি হয়। তা হল, যদি আমরা জাহিরের চেয়ে সত্যিই সত্যিই ব্যস্ত থাকতাম, কিংবা সময়ের কাজটা সময়েই শেষ করতে পারতাম তাহলে আমাদের তথা গোটা দেশের উন্নয়নটা হয়তো শুধু ভিজুয়ালি হত না। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। ধরুন আপনাকে কিছু টি-শার্ট ডিজাইনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আপনার হাতে এরকম আরও দুটো প্রজেক্ট রয়েছে। আপনার ওই দুটো প্রজেক্ট শেষ করতে আনুমানিক তিন থেকে চারদিন সময় লাগবে। আপনি তার পরই নতুন প্রজেক্টের কাজ শুরু করতে পারবেন। কিন্তু আপনি নিজের ব্যস্ততা জাহির করতে যেয়ে আপনার নতুন ক্লায়েন্টকে বললেন আপনি সাতদিন পর কাজটা হাতে নিতে পারবেন। আপনি কাজটা সাতদিন পরই হাতে নিলেন। কিন্তু আপনি যে কাজটা দুদিনে শেষ করতে পারতেন সেটা পিছিয়ে এক সপ্তাহেও শেষ করতে পারলেন না! কারণ আপনার আগের যে দুজন ক্লায়েন্ট ছিল তারা ফিডব্যাক জানাতে যেখানে সর্বোচ্চ দুদিন টাইম নেয়া দরকার ছিল সেখানে তারা দুদিন মেসেজ সিনই করলেন না। ফোন করলেও ব্যস্ততা বলে পাশ কাটিয়ে যেতেন। তারা তৃতীয় দিন ‘দেখছি’ বলে পঞ্চমদিন আপনাকে ফিডব্যাক জানালো ও কিছু কারেকশন দিল। আর ঠিক যেদিনটায় দিল ঠিক সেদিনই আপনার তৃতীয় ব্যক্তির প্রজেক্টের কাজ শুরু করার কথা ছিল। আপনার পূর্বের ক্লায়েন্টদের এরূপ আচরণের মূলে, “আমি শুধু টি-শার্ট নিয়ে ব্যস্ত না আমার আরও কাজ রয়েছে” বোঝাতে চেয়েছেন। তাদের আলবাত রয়েছে আরও ব্যস্ততা, কিন্ত সেসব ব্যস্ততার পাশাপাশি বন্ধুর বিয়ে বলে একবেলার জায়গায় পুরোদিনের ব্যস্ততা দেখানো, দুইঘন্টার মিটিং এর নাম করে কিছুক্ষণ খোসগল্পের সুবাদে তিনঘন্টা কাটিয়ে আধঘন্টা মিটিং, তারপর লাঞ্চ করে আবার কতক্ষণ আদিখ্যেতা, আর যখন বের হল তখন দেখা গেল তার দুইঘন্টার জায়গায় পুরো বেলাটাই চলে গেল। যার ফলে উনি এ কয়দিন আপনার কাজটা ১০ মিনিট বসে দেখতেই পারলেন না। প্রথমে আপনার ‘ব্যস্ততা’ ও পরবর্তীতে আপনার ক্লায়েন্টের ‘ব্যস্ততা’য় আপনার তৃতীয় ক্লায়েন্টের কাজ সপ্তাহ পেরুলেও শেষ করতে পারলেন না। আর আপনার চতুর্থ-পঞ্চমসহ বাকি ক্লায়েন্টের কাজ আপনি নিজেই জানেন না কবে শেষ করবেন। যার ফলে আপনার কাজের বোঝা বেড়েই চলল।
কি খুব জটিল লাগছে কথাগুলো? কেমন জগাখিচুরি? জ্বি হ্যাঁ, আপনি এবং আমি নিজের অজান্তেই এমন জগাখিচুরি সিস্টেমের জন্ম দিয়েছি। তা শুনতে বা পড়তে যতটা না বিরক্তিকর তার বাস্তব রূপ আরও ভয়াবহ।
অথচ আপনি এবং আপনার ক্লায়েন্ট দুজনই যদি এ দীর্ঘসূত্রতার লেজুড়বৃত্তি না করতেন তাহলে দুটো লাভ হতঃ
১। আপনি ঠিক একই সময়ে এখন যা কামাচ্ছেন তার থেকে আরও দুই থেকে তিনগুন বেশি কামাতে পারতেন।
২। আপনার ক্লায়েন্টও কাজের শিডিউল দীর্ঘ না করে তার নিজের কোম্পানি রেপুটেশন বাড়াতে পারতেন। সেইসাথে তার বসের সুনজরও পেতেন। হয়তো ভাল কাজের সুবাদে বোনাসও পেতেন, আবার চাকরিতে তরতরিয়ে প্রমোশনও হয়ে যেত। তাকে দেখাদেখি আরও দশটা মানুষের কাজের গতিও বেড়ে যেত।
অথচ এভাবেই ওয়ার্কিং আওয়ার গুলো আপনি ও আমি নিজের খামখেয়ালিতে নষ্ট করে নিজেরাও আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি সেইসাথে গোটা দেশের অর্থনীতির চাকাকে ‘ওয়ার্কিং আওয়ার’ নষ্টের মাধ্যমে স্থবির করে রেখেছি। তাহলে একবার ভাবুন কয়েক হাজার কিংবা কয়েক লাখ কাস্টমারকে সার্ভ করতে যেয়েই যেখানে এত করুণ অবস্থা সেখানে সারাদেশের জনগণকে সার্ভ করতে গেলে সরকারি অফিসে একদিনের কাজ একমাস কিংবা ছয়মাস লাগবে না কেন বলুন? আফটার অল তারাও তো আপনার আর আমার মতই মানুষ, ভিনগ্রহী তো কেউ নয়।
এখন আপনারা একটা প্রশ্ন রাখতে পারেন, তাহলে বাইরের দেশের সরকারি অফিস কিংবা দপ্তরগুলো এত ফাস্ট কেন? উত্তরটা আপনার কাছেই, কারণ তারা আমাদের মত না, তারা মানুষগুলোই ফাস্ট।
পরিশেষে একটা কথাই বলতে চাই, আমরা ছোটবেলা থেকে শুধু পরীক্ষার খাতায় ‘সময়ানুবর্তিতা’ লিখেই এসেছি কিন্তু এর প্রকৃত অর্থ কেউই আস্বাদন করতে পারিনি।
লিখাঃ নিশাত সাল সাবিল
Pretty enlightening….look ahead to coming back.
Thanks
Aftеr looкing over ɑ hanndful օf thе articles ⲟn үoսr site,
I seriously appreciate yoᥙr technique oof writing a blog.
Ӏ book marked it to my bookmark site list аnd wiⅼl be checking bɑck in the near future.
Pleasе visit my website tօⲟ аnd let me
kno how you feel.
Thanks
Thanks for finally talking about > ওয়ার্কিং আওয়ার
গুলো আপনি ও আমি নিজের
খামখেয়ালিতে নষ্ট করছি –
Bits. | Social Organization < Liked it!
Excellent beat ! I wish to apprentice while you amend your site, how can i subscribe for a blog website?
The account helped me a acceptable deal. I had been tiny bit acquainted of this
your broadcast provided bright clear concept